গাছের পাতা সাধারণত সবুজ রঙের কারণ
গাছের পাতা সাধারণত সবুজ রঙের হয় ক্লোরোফিল (Chlorophyll) নামক একটি রঞ্জকের (pigment) কারণে। এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া যায় এমনভাবে:
কেন সবুজ রঙ হয়?
- সূর্যালোক শোষণ ও প্রতিফলন:
সূর্যের আলোতে সাতটি রঙ থাকে (রেইনবো রঙগুলো), যাকে বলে বর্ণালী (spectrum)। ক্লোরোফিল মূলত নীল (blue) ও লাল (red) আলোকরশ্মি বেশি শোষণ করে, কিন্তু সবুজ আলো প্রতিফলিত করে বা ফিরিয়ে দেয়। তাই আমাদের চোখে পাতাগুলো সবুজ দেখায়। - ক্লোরোফিলের গঠন:
ক্লোরোফিল একটি জটিল জৈব অণু, যার কেন্দ্রীয় অংশে ম্যাগনেশিয়াম থাকে। এটির গঠন এমনভাবে তৈরি, যাতে এটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো (blue এবং red) খুব ভালোভাবে শোষণ করতে পারে। সবুজ আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষণের জন্য উপযোগী নয় বলে তা প্রতিফলিত হয়। - ফটোসিনথেসিস (Photosynthesis):
এই ক্লোরোফিলই গাছের জন্য আলো শোষণ করে তা থেকে শক্তি তৈরি করে, যার মাধ্যমে পানির সাথে কার্বন ডাইঅক্সাইড মিশিয়ে গ্লুকোজ (চিনি) ও অক্সিজেন তৈরি করে। এটাই হচ্ছে প্রকাশ-প্রক্রিয়া, গাছের খাবার বানানোর প্রক্রিয়া।
সবুজ ছাড়া অন্য রঙ হতে পারত?
হ্যাঁ, হতে পারত — প্রকৃতিতে এমন উদ্ভিদও আছে যাদের পাতায় অ্যান্থোসায়ানিন, ক্যারোটিনয়েড ইত্যাদি রঞ্জক থাকে। যেমন:
- গাজর-এর রঙ কমলা — ক্যারোটিনয়েডের জন্য।
- রক্তচাপ কমানো পাতাজাতীয় উদ্ভিদ বা লাল ধান — এতে অ্যান্থোসায়ানিন থাকে।
কিন্তু সবচেয়ে কার্যকর এবং প্রচলিত রঞ্জক হচ্ছে ক্লোরোফিল, কারণ এটি সবচেয়ে কার্যকরভাবে সূর্যালোক শোষণ করতে পারে এবং গাছকে জীবিত রাখতে পারে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তরুলতাকে সবুজ রঙ হিসেবে গ্রহণ করলেন কেন মুফাসসিরগণ বা দার্শনিকগণ এ বিষয়ে কি গবেষণা করে?
তোমার প্রশ্নটা খুবই সূক্ষ্ম, হৃদয় ছোঁয়া এবং গভীর ভাবনার দাবি রাখে। “আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কেন তরুলতাকে সবুজ রঙে সাজালেন?” — এই প্রশ্নটি শুধু বৈজ্ঞানিক নয়, এটি আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামী মুফাসসিরগণের দৃষ্টিতে সবুজ রং ও তরুলতা:
- সবুজ রঙ কুরআনে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী:
কুরআনে সবুজ রঙকে জান্নাতের রঙ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুরা আল-ইনসান, আয়াত ২১:“عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ…”
“তাদের উপরে থাকবে সবুজ রঙের সূক্ষ্ম রেশমী ও মোটা রেশমী কাপড়…”অর্থাৎ, সবুজ রঙ জান্নাতের স্বস্তি, শান্তি ও প্রশান্তির প্রতীক।
- মুফাসসিরগণ বলেন:
সবুজ হচ্ছে এমন একটি রঙ যা চোখে আরাম দেয়, মনকে প্রশান্ত করে। আল্লাহ যেহেতু মানবজাতিকে দয়া করেছেন, তাই তাদের নিত্য চোখের সামনে যে রঙ রাখলেন (তরুলতা, বৃক্ষ, বনানী), সেটি এমন রঙে রাখলেন যাতে দৃষ্টিতে শান্তি আসে। এটি আল্লাহর এক রহমত ও হিকমত। - ইমাম গাযযালী (রহ.) ও অন্যান্য দার্শনিকদের দৃষ্টিভঙ্গি:
ইসলামি দার্শনিকেরা বলেন, প্রকৃতির রঙে, সৌন্দর্যে এবং ব্যালেন্সে আল্লাহর সৃষ্টিশীলতা ও কুদরত প্রকাশ পায়। সবুজ এমন এক রঙ যা উর্বরতা, জীবন ও পুনর্জাগরণের প্রতীক। গাছপালা সবুজ বলেই পৃথিবী “জীবন্ত”। সবুজ মানেই সজীবতা।
দার্শনিক দৃষ্টিকোণ (বিশ্বদর্শনের আলোকে)
- সবুজ মানে জীবনের জাগরণ:
গাছ মানে অক্সিজেন, মানে নিঃশ্বাস, মানে জীবন। সবুজ মানেই পৃথিবীর প্রাণ। - নান্দনিক ব্যাখ্যা:
সবুজ এমন রঙ যা কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম, জাতি বা বর্ণকে প্রতিনিধিত্ব করে না — এটি সর্বজনীন, একটি “ঈশ্বরীয় শান্তি”র রঙ।
তরুলতা যদি রক্তবর্ণ হতো, হয়তো পৃথিবী দেখতাম ভয় ও অস্থিরতায়; যদি কালো হতো, দুঃখে ভরতো মন। কিন্তু সবুজ বলে পৃথিবী এক প্রশান্তির ঘর।