খাবারের ত্রুটি
ঈদের ছুটি ভাইয়া আসবে আসবে দুলাভাই,
আপু আসবে ,ভাগ্নে আসবে ,খুশির অন্ত নাই।
শখের বশে তরুণী তাই, করে বসল পণ,
নিজের হাতে করবে সকল, খাবার আয়োজন।
নিজের হাতে রান্না করবে, হৃদয় উজার করে
আহা কি স্বাদ! অতিথীরা, বলবে খেয়ে পরে।
কিরে পাগলী এমন রান্না, শিখলি আবার কবে,
ছোট ভাইয়া বলবে যখন, কি যে মজা হবে!
বড় ভাইয়া খেতে খেতে মাকে দেবে ডাক
বলবে মা গো খাবার টা আজ, কে করেছে পাক?
মা বলবে, কস নে বাবা! তোর ছোট বোন আলো।
প্রথম হলেও, ঠিক না বাবা, বেশ হয়েছে ভালো!
বড় ভাইয়া মুচকি হেসে, বলবে সাথে সাথে
আসলে মা জাদু আছে, আলো মনির হাতে।
আমি তখন সবার করা আদর প্রশংসায়,
ভেসে ভেসে হারিয়ে যাব সুখের মোহনায়।
কথার ছলে হেসে তখন, বলবে দুলাভাই
পাকা গিন্নির জন্য এবার, ভালো ছেলে চাই।
সবাই যখন হাসবে সুখে, আমার রান্না খেয়ে
দু চোখ জুড়ে আনন্দের জল, পড়বে বেয়ে বেয়ে।
আসলো সবাই দিলাম আমি নিজের হাতে খেতে,
প্রশংসা নেই খাচ্ছে সবাই, খোশ গল্পে মেতে।
লাজ ভেঙ্গে কই, বলো ভাইয়া, রান্না কেমন হলো?
ভাইয়া বলে কেমন জানি, লাগছে এলোমেলো!
মনে হচ্ছে হলুদ বেশি,লবণ একটু কম
কথা শুনে যাচ্ছে আমার, বন্ধ হয়ে দম!
দুলাভাই কয় তরকারিতে, বিশ্রী কেমন ঘ্রান
হঠাৎ ঝড়ে ভেঙ্গে গেল, আলো মনির প্রাণ।
এখনো তার জ্বলছে দু হাত মরিচ বাটার ঝালে
চুলার কালি লেগে আছে এখনো তার গালে।
পেঁয়াজ কাটার যন্ত্রণাতে ঝরছে চোখে পানি
ঘামের জলে ভিজে আছে সোনার অঙ্গখানি।
ভালো মানের খাবার দিতে অতিথীদের মুখে,
ঝরছে পানি ছোট্ট খুকি আলো মনের চোখে।
খাদকেরা এই দিল তার শ্রমের প্রতিদান
মন্দ বলে ভেঙ্গে দিল আলো মনির প্রাণ।
আলোমনি দৌড়ে গিয়ে বালিশ চেপে বুকে
অনাহুত যন্ত্রনাতে, মরছে ধুকে ধুকে।
তিক্ত হলেও সত্যি আমরা, খাবারের দোষ বলি
রাধুনীর মন ভেঙে চুরে, বুকে আগুন জ্বালি।
মন্দ বললে কখনো কি, খাবারের স্বাদ বাড়ে?
বরং একটি পাপের কালি, আমলনামায় পরে।
সকল জেনেও খাবারের দোষ বলে সর্বজন
ভেঙ্গে ফেলে বধু মাতা কন্যা বোনের মন।
লেখায়:-ফেরদৌস আহমেদ।
বই :-কালের চিত্র